বিশেষ প্রতিবেদন:
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছিল কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া। সেই লোকসান কী করে কাটিয়ে ওঠা যাবে, সেই হিসেব কষতে ও নানা পরিকল্পনা করতে যখন ব্যস্ত প্রকাশকরা, তখনই সব হিসেব গোলমাল করে দিল আমফান। শোনা যাচ্ছিল, রাজ্যে লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ায় ২১ মে থেকে ধীরে ধীরে বইপাড়ার দোকানগুলি খুলতে শুরু করবে। কিন্তু বুধবারের সুপার সাইক্লোন এক কথায় ভাসিয়ে দিয়েছে বইপাড়াকে। বেলাগাম বৃষ্টি তছনছ করে দিয়েছে প্রকাশক, লেখক, পাঠকের এই প্রিয় জায়গাটিকে।
বৃহস্পতিবার ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যায় কলেজ স্ট্রিটের ভগ্ন চেহারা। তখনই উঠে আসে বইপাড়ার করুণ ছবি। ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে, জল থইথই গোটা কলেজ স্ট্রিটে ভেসে যাচ্ছে হাজার হাজার বই। খবর পেয়েই বিভিন্ন জায়গা থেকেই প্রকাশক এবং বিক্রেতারা ছুটে আসেন। ভেসে যাওয়া থেকে বই বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ছোট ছোট বই বিক্রেতাদের চোখের জল ফেলতেও দেখা গিয়েছে। যাঁদের গুমটি দোকান, তাঁদের অনেকেরই পুরো দোকানই উড়িয়ে এবং ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে আমফান।
পাশাপাশি বিক্রেতা বা প্রকাশকদের অনেকে সব শুনেও আসতে পারেননি যানবাহন না চলায়। লকডাউন শিথিল হওয়ায় কিছু গাড়ি রাস্তায় নামলেও আমফানের কারণে ফের অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া লোকাল ট্রেন চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। তাই যাঁরা দূরে থাকেন, তাঁদের অনেকেই আসতে পারেননি। শুধু সাধারণ প্রকাশক বা বিক্রেতারাই নন, বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলির বিক্রয় কেন্দ্রও রেহাই পায়নি আমফানের আক্রোশ থেকে। দেজ পাবলিশিংয়ের কয়েক ফুট উঁচু ঘরগুলিতেও পৌঁছে গিয়েছে রাস্তায় জমা বৃষ্টির জল।
কিন্তু বইপাড়ার ক্ষতি নিয়ে কিছু আন্দাজ করতে পারেননি দে’জের কর্ণধার শুধাংশুশেখর দে। তবে তিনি জানালেন, ক্ষতির পরিমাণ বিশালই হবে। দুর্যোগ কেটে গেলে তখন আসল হিসাব করা যাবে। বইপাড়ায় দেব সাহিত্য কুটিরের বিক্রয় কেন্দ্রের ভেতরেও জল ঢুকেছে শাটার ভেদ করে। এ ছাড়া জল ঢুকেছে কাছাকাছি ঝামাপুকুর লেনে দেব সাহিত্য কুটিরের অফিসেও। সেখান থেকেও ভেসে গিয়েছে বহু বইপত্র। কর্ণধার রূপা মজুমদার বলেই দিলেন, ‘এখনই ক্ষতির পরিমাণ সঠিক করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
দেখে অনেকেই বিস্মিত। কেউ কেউ আবার দোষ দিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রেতাদেরই। তাঁদের বক্তব্য, সব কিছু আধুনিক হলেও বইপাড়া এখনও পড়ে রয়েছে মান্ধাতার আমলেই। যেন তেন প্রকারেণ বই জমা করে রেখে দিলেই হল। অন্যান্য পণ্যের মতো বইগুলি শুধু বিক্রি করে দেওয়া তাঁদের উদ্দেশ্য। পাঠকের সঙ্গে বইয়ের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তেমন উদ্যোগ তাঁদের মধ্যে দেখা যায় না। তাই বই সংরক্ষণেও তাঁদের উদাসীনতা দেখা যায়। তাঁদের কাছে বই শুধুই পণ্য, আর কিছু নয়। তাই যেমন তেমন ভাবে কাউন্টারে রেখে দেওয়া হয় বইপত্র। তারই খেসারত দিতে হল আমফানের তাণ্ডবে।